আঁচিল কেন হয়? এর কারণ এবং চিকিৎসা

আঁচিল কী এবং এর বৈশিষ্ট্য

আঁচিল কী?
আঁচিল (Wart) হলো ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, যা হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) এর কারণে সৃষ্টি হয়। এটি ত্বকের উপরে ছোট ছোট গুটি বা বৃদ্ধি হিসেবে দেখা যায়। আঁচিল সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, তবে এটি কখনো কখনো অস্বস্তি বা সৌন্দর্যের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

আঁচিলের বৈশিষ্ট্য

  • চেহারা: আঁচিল সাধারণত ছোট এবং শক্ত হয়। এগুলো মসৃণ বা অসমতল হতে পারে এবং রঙের দিক থেকে চামড়ার রঙ, সাদা, বাদামি বা ধূসর হতে পারে।
  • গঠন: ত্বকের ওপর উঁচু গুটি, কখনো কখনো এটি খসখসে এবং মোটা দেখা যায়।
  • প্রকারভেদ: আঁচিল বিভিন্ন রকমের হতে পারে, যেমন:
    1. সাধারণ আঁচিল (Common Warts): সাধারণত আঙুল বা হাতের পেছনের দিকে দেখা যায়। এগুলো খসখসে এবং শক্ত।
    2. প্লান্টার আঁচিল (Plantar Warts): পায়ের তালুতে দেখা যায়। এগুলো অনেক সময় ব্যথাযুক্ত হয়।
    3. ফ্ল্যাট আঁচিল (Flat Warts): মুখ, কপাল বা ঘাড়ে দেখা যায়। এগুলো ছোট, মসৃণ এবং চ্যাপ্টা হয়।
    4. ফিলিফর্ম আঁচিল (Filiform Warts): চোখ, নাক বা মুখের চারপাশে পাতলা এবং লম্বা আঁচিল দেখা যায়।

আঁচিল কোথায় গড়ে ওঠে?

  • হাত, পা, মুখ, গলা, বা শরীরের এমন যে কোনো অংশে আঁচিল দেখা যেতে পারে যেখানে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।
  • প্লান্টার আঁচিল সাধারণত পায়ের তলায় এবং ফ্ল্যাট আঁচিল মুখ ও ঘাড়ে বেশি দেখা যায়।
আঁচিল কেন হয়

আঁচিল কেন হয়?

আঁচিল (Wart) মূলত হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) দ্বারা সৃষ্ট হয়। এই ভাইরাস ত্বকের বাইরের স্তরে আক্রমণ করে এবং কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়, যার ফলে আঁচিলের গঠন হয়।
বিশেষত, এটি শরীরের যে কোনো খোলা বা ক্ষতিগ্রস্ত অংশে প্রবেশ করতে পারে এবং সেখানে সংক্রমণ ঘটায়।

আঁচিল গঠনের কারণসমূহ

  1. হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV):
    • এটি একটি ভাইরাসের পরিবার যা ত্বক এবং মিউকাস মেমব্রেন সংক্রমণ করে।
    • প্রায় ১৫০টিরও বেশি প্রকারের HPV রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি আঁচিল সৃষ্টি করে।
  2. ত্বকের ক্ষত বা আঘাত:
    • ত্বকের কোথাও ছোট কাটা, আঁচড় বা ক্ষত থাকলে ভাইরাস সহজেই সেখানে প্রবেশ করতে পারে।
    • পায়ের তলায় যে চাপ পড়ে (যেমন: হাঁটাচলা বা দাঁড়ানোর কারণে) তাও প্লান্টার আঁচিলের একটি কারণ হতে পারে।
  3. দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা (Immune System):
    • যাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল (যেমন: শিশু, বয়স্ক, বা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি), তাদের মধ্যে আঁচিল হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
    • ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে শরীর সহজেই HPV ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে পারে না।
  4. ত্বকের সংস্পর্শ:
    • ত্বকের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ (যেমন: হাত মেলানো) বা আক্রান্ত জিনিস (যেমন: তোয়ালে, জুতো) স্পর্শ করলে ভাইরাস ছড়াতে পারে।
    • সুইমিং পুল, জিম, বা বাথরুমের মেঝে যেখানে মানুষ খালি পায়ে হাঁটে, সেখান থেকেও ভাইরাস সংক্রমণ ঘটতে পারে।
  5. আর্দ্র পরিবেশ:
    • ত্বক দীর্ঘ সময় ভেজা থাকলে বা আর্দ্র পরিবেশে থাকলে ভাইরাসের বৃদ্ধি বাড়তে পারে।

আঁচিল মূলত একটি ভাইরাসজনিত সমস্যা, যা ত্বকের ক্ষত বা দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের সুযোগ নিয়ে তৈরি হয়। এটি সরাসরি সংস্পর্শ বা পরিবেশ থেকে ছড়াতে পারে। আঁচিলের কারণগুলো বোঝার মাধ্যমে এটির প্রতিরোধের উপায়ও খুঁজে বের করা সম্ভব।

আঁচিল সংক্রমণের ঝুঁকি

আঁচিল কীভাবে সংক্রমিত হয়?
আঁচিল সংক্রমণের প্রধান মাধ্যম হলো হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV)। এই ভাইরাস ত্বকের মাধ্যমে ছড়ায়, সরাসরি অথবা পরোক্ষভাবে। একবার ত্বকে প্রবেশ করলে এটি ত্বকের কোষগুলিকে প্রভাবিত করে, যার ফলে আঁচিলের গঠন ঘটে।

আঁচিল সংক্রমণের পদ্ধতি

  1. মানুষের মধ্যে সরাসরি সংস্পর্শ:
    • আঁচিলযুক্ত ত্বকের স্পর্শ করলে এটি অন্যের ত্বকে ছড়াতে পারে।
    • হাত মেলানো, গালে চুম্বন, বা অন্য কোনো সরাসরি শারীরিক যোগাযোগ সংক্রমণ ঘটায়।
  2. পরোক্ষ সংস্পর্শ:
    • এমন জিনিসের সংস্পর্শে আসা যা আগেই সংক্রমিত হয়েছে (যেমন: তোয়ালে, জুতো, কাঁচি) আঁচিল ছড়াতে পারে।
    • পাবলিক জায়গা যেমন সুইমিং পুল, জিম, বা স্নানের স্থান যেখানে সবাই খালি পায়ে হাঁটে, সেখান থেকেও সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায় এমন অভ্যাস এবং পরিবেশ

  1. খারাপ স্বাস্থ্য অভ্যাস:
    • ঘন ঘন আঁচিল স্পর্শ করা বা আঁচড়ানো ভাইরাসকে শরীরের অন্য অংশে ছড়াতে পারে।
    • ত্বকের খোলা ক্ষত বা আঁচিল ঢেকে না রাখলে ভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে।
  2. আর্দ্র এবং গরম পরিবেশ:
    • আঁচিলের জন্য HPV ভাইরাস আর্দ্র পরিবেশে আরও সক্রিয় থাকে।
    • পা ঘামলে বা দীর্ঘক্ষণ ভেজা অবস্থায় থাকলে প্লান্টার আঁচিলের ঝুঁকি বাড়ে।
  3. অন্যদের সাথে ব্যক্তিগত জিনিস ভাগাভাগি করা:
    • তোয়ালে, চিরুনি, নখ কাটার যন্ত্র বা জুতো ব্যবহার করা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. দুর্বল ইমিউন সিস্টেম:
    • যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, যেমন শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, বা যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত রোগী, তাদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখা যায়।
  5. পাবলিক স্থানে খালি পায়ে হাঁটা:
    • সুইমিং পুল, জিম, বা স্নানের ঘর যেখানে অনেক মানুষ যায়, সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

সংক্ষেপে:
আঁচিল সহজেই সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ছড়াতে পারে। জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস ও পরিবেশগত কারণ, যেমন ব্যক্তিগত জিনিস ভাগাভাগি করা, ত্বকের ক্ষত, বা আর্দ্র পরিবেশে থাকা, সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি এবং সাবধানতা অবলম্বন করলে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

আঁচিলের প্রতিকার ও চিকিৎসা

আঁচিল একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা হলেও এটি কখনো কখনো অস্বস্তি বা অঙ্গসৌষ্ঠব নষ্ট করতে পারে। তাই এর প্রতিকার ও চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। নিচে বাড়িতে ব্যবহারযোগ্য প্রাকৃতিক উপায় থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির বিষয়ে আলোচনা করা হলো।


১. বাড়িতে আঁচিলের প্রতিকার (Home Remedies):
কিছু প্রাকৃতিক উপাদান ও সহজ পদ্ধতি আঁচিল কমাতে সহায়ক হতে পারে:

  • স্যালিসিলিক অ্যাসিড:
    এটি বাজারে পাওয়া যায় এবং আঁচিলের জন্য সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা। স্যালিসিলিক অ্যাসিড লাগানোর আগে ত্বক নরম করতে আঁচিল এলাকাটি গরম পানিতে ভিজিয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে এটি আঁচিল ধীরে ধীরে সরিয়ে দেয়।
  • ভিনেগার (Apple Cider Vinegar):
    তুলোতে সামান্য অ্যাপল সিডার ভিনেগার নিয়ে আঁচিলের উপর লাগিয়ে রাখুন। এটি ত্বক পরিষ্কার করে এবং আঁচিল অপসারণে সহায়তা করে।
  • রসুন:
    রসুন চেপে পেস্ট তৈরি করে আঁচিলের উপর লাগিয়ে রাখুন। রসুনে অ্যান্টি-ভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ভাইরাস দূর করতে সহায়তা করে।
  • অ্যালোভেরা:
    অ্যালোভেরা জেল আঁচিলের উপর লাগালে এটি প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে নরম করে এবং আঁচিল ধীরে ধীরে সরে যায়।
  • কাঁচা আলু:
    আলুর টুকরা আঁচিলের উপর নিয়মিত লাগালে এটি শুকিয়ে যায়।

২. চিকিৎসাগত পদ্ধতি (Medical Treatments):
যদি বাড়ির প্রতিকার কার্যকর না হয় বা আঁচিল দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে নিম্নলিখিত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করা যেতে পারে:

  • ক্রায়োথেরাপি (Cryotherapy):
    এটি একটি পেশাদার চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে আঁচিলকে তরল নাইট্রোজেন দিয়ে ফ্রিজ করে মারা হয়। এটি দ্রুত কার্যকর তবে সামান্য ব্যথা হতে পারে।
  • লেজার চিকিৎসা:
    আঁচিল সরানোর জন্য শক্তিশালী লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হয়। এটি কার্যকর এবং বড় আঁচিলের জন্য উপযোগী।
  • ক্যানথারিডিন (Cantharidin):
    এই রাসায়নিক পদার্থ আঁচিলের উপর লাগালে এটি ফোস্কা ফেলে, যা পরে ডাক্তার দ্বারা সরানো হয়।
  • ইলেকট্রোকটারি:
    আঁচিল পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং বড় আঁচিলের জন্য উপকারী।

৩. কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন?
নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ:

  • আঁচিল অনেক বড় হয়ে গেলে বা তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়লে।
  • বাড়ির প্রতিকার বা ওষুধ কাজ না করলে।
  • আঁচিল থেকে রক্তপাত, ব্যথা, বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিলে।
  • আঁচিল এমন জায়গায় হলে (যেমন: মুখ, গলা, বা চোখের কাছে) যা চিকিৎসার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
  • প্লান্টার আঁচিল, যা হাঁটার সময় ব্যথা সৃষ্টি করে।

সংক্ষেপে:
আঁচিলের চিকিৎসা বাড়িতে শুরু করা যেতে পারে, তবে প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তারি চিকিৎসা নেওয়া উচিত। সঠিক চিকিৎসা ও প্রতিকার দ্রুত এবং নিরাপদ উপায়ে আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে।

আঁচিল প্রতিরোধের উপায়

আঁচিল ভাইরাসজনিত সমস্যা (HPV) থেকে সৃষ্টি হয়। এটি সংক্রমণশীল হলেও কিছু অভ্যাস এবং সতর্কতা মেনে চললে সহজেই আঁচিল প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিচে আঁচিল প্রতিরোধের জন্য কার্যকর উপায়গুলো তুলে ধরা হলো:


১. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা:

  • নিয়মিত হাত ধোয়া, বিশেষ করে জনবহুল স্থানে যাওয়ার পর।
  • ত্বক পরিষ্কার এবং শুকনো রাখা।
  • শরীরের ক্ষতস্থান পরিষ্কার রাখা এবং দ্রুত সঠিকভাবে ঢেকে ফেলা, যেন ভাইরাস ত্বকে প্রবেশ করতে না পারে।

২. সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শ এড়ানো:

  • অন্য কারও আঁচিল স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
  • আঁচিলের উপর ঘষাঘষি করা বা খোঁচানো থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি ভাইরাসকে শরীরের অন্য অংশে ছড়াতে পারে।

৩. ব্যক্তিগত জিনিস ব্যবহার করুন:

  • তোয়ালে, নখ কাটার যন্ত্র, মোজা, এবং জুতো ভাগাভাগি করবেন না।
  • বিশেষ করে সুইমিং পুল বা জিমের মতো স্থান থেকে আসার পর ব্যক্তিগত জিনিসগুলো পরিষ্কার করুন।

৪. খালি পায়ে হাঁটা এড়িয়ে চলুন:

  • পাবলিক প্লেস, যেমন সুইমিং পুল, জিমের মেঝে, বা বাথরুমে খালি পায়ে হাঁটা এড়ান।
  • পায়ে আঁচিলের ঝুঁকি কমানোর জন্য স্লিপার বা স্যান্ডেল ব্যবহার করুন।

৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ান:

  • সুস্থ এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
  • পর্যাপ্ত ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  • ধূমপান বা অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস এড়িয়ে চলুন, কারণ এটি ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে।

৬. আঁচিল শুরুতেই চিকিৎসা করুন:

  • যদি আঁচিল দেখা যায়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করুন।
  • সময়মতো চিকিৎসা না করলে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে।

৭. পরিষ্কার এবং শুকনো পরিবেশ বজায় রাখুন:

  • গরম ও আর্দ্র পরিবেশে ভাইরাস দ্রুত বৃদ্ধি পায়, তাই নিজের আশপাশের পরিবেশ শুকনো ও পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • পায়ের ঘাম কমানোর জন্য কটনের মোজা ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত মোজা পরিবর্তন করুন।

৮. HPV ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন (যদি সম্ভব হয়):

  • কিছু ক্ষেত্রে HPV ভ্যাকসিন আঁচিল সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি গ্রহণ করতে পারেন।

সংক্ষেপে:
আঁচিল প্রতিরোধ করতে হলে ত্বকের যত্ন নেওয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি কমানো জরুরি। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এবং ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী রাখলে আঁচিল হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

আঁচিল সম্পর্কিত প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)

প্রশ্ন ১: আঁচিল কী?
উত্তর: আঁচিল (Wart) হলো ত্বকের উপরিভাগে ছোট ছোট গুটি বা বৃদ্ধি, যা হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (HPV) দ্বারা সৃষ্ট হয়। এটি সাধারণত ত্বকের রঙের মতো বা কিছুটা গাঢ় হতে পারে এবং খসখসে বা মসৃণ হতে পারে।


প্রশ্ন ২: আঁচিল কেন হয়?
উত্তর: আঁচিল মূলত HPV ভাইরাসের কারণে হয়। এই ভাইরাস ত্বকের ক্ষত বা ছোট কাটা অংশ দিয়ে প্রবেশ করে এবং ত্বকের কোষে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়। দুর্বল ইমিউন সিস্টেমও আঁচিল হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।


প্রশ্ন ৩: আঁচিল কি সংক্রামক?
উত্তর: হ্যাঁ, আঁচিল সংক্রামক। এটি সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে বা সংক্রমিত জিনিস (যেমন তোয়ালে বা জুতো) ব্যবহার করলে ছড়াতে পারে।


প্রশ্ন ৪: আঁচিল কি নিজে নিজেই সেরে যায়?
উত্তর: অনেক সময় আঁচিল কয়েক মাস বা বছর পরে নিজে থেকেই সেরে যায়, কারণ ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসের বিরুদ্ধে কাজ করে। তবে, কিছু আঁচিল দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।


প্রশ্ন ৫: আঁচিলের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি কী?
উত্তর:
চিকিৎসার পদ্ধতি আঁচিলের আকার, ধরন এবং অবস্থানের উপর নির্ভর করে। সাধারণ চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে:

  • স্যালিসিলিক অ্যাসিড
  • ক্রায়োথেরাপি (তরল নাইট্রোজেন দিয়ে ফ্রিজ করা)
  • লেজার চিকিৎসা
  • প্রাকৃতিক প্রতিকার, যেমন ভিনেগার বা রসুন ব্যবহার

প্রশ্ন ৬: আঁচিল অপসারণ ব্যথাযুক্ত কি না?
উত্তর: কিছু চিকিৎসা পদ্ধতিতে সামান্য ব্যথা হতে পারে, যেমন ক্রায়োথেরাপি বা লেজার চিকিৎসা। তবে, আধুনিক পদ্ধতিগুলি সাধারণত সহনীয় এবং ডাক্তার ব্যথা কমানোর ব্যবস্থা করেন।


প্রশ্ন ৭: আঁচিল থেকে কীভাবে সংক্রমণ এড়ানো যায়?
উত্তর: সংক্রমণ এড়াতে নিচের নিয়মগুলো মেনে চলুন:

  • অন্যের আঁচিল স্পর্শ করবেন না।
  • ব্যক্তিগত জিনিস যেমন তোয়ালে, জুতো, বা নখ কাটার যন্ত্র ভাগাভাগি করবেন না।
  • পাবলিক প্লেসে খালি পায়ে হাঁটবেন না।
  • আঁচিল স্পর্শ বা আঁচড়ানো এড়িয়ে চলুন।

প্রশ্ন ৮: শিশুদের মধ্যে আঁচিল বেশি কেন দেখা যায়?
উত্তর: শিশুদের ইমিউন সিস্টেম পূর্ণ শক্তিশালী হয় না, তাই তাদের মধ্যে আঁচিল হওয়ার প্রবণতা বেশি। এছাড়া, তারা খেলার সময় বেশি পরিমাণে খোলা ত্বক নিয়ে চলাফেরা করে, যা ভাইরাস সংক্রমণের সুযোগ করে দেয়।


প্রশ্ন ৯: আঁচিল কি ক্যানসারের কারণ হতে পারে?
উত্তর: সাধারণ আঁচিল ক্যানসারের কারণ নয়। তবে, কিছু নির্দিষ্ট প্রকারের HPV ভাইরাস (যেমন: HPV-16 এবং HPV-18) দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।


প্রশ্ন ১০: আঁচিলের চিকিৎসার পর এটি আবার হতে পারে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, যদি ভাইরাস পুরোপুরি দূর না হয় বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, তাহলে আঁচিল আবার হতে পারে। সঠিক স্বাস্থ্যবিধি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে পুনরায় হওয়ার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।


প্রশ্ন ১১: আঁচিলের চিকিৎসা কখন বাধ্যতামূলক?
উত্তর: চিকিৎসা তখন বাধ্যতামূলক, যখন:

  • আঁচিল ব্যথাযুক্ত হয়।
  • এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
  • মুখ, চোখ, বা গোপন স্থানে আঁচিল দেখা যায়।
  • আঁচিল থেকে রক্তপাত বা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা যায়।

প্রশ্ন ১২: আঁচিল অপসারণে প্রাকৃতিক প্রতিকার কতটা কার্যকর?
উত্তর: প্রাকৃতিক প্রতিকার যেমন ভিনেগার বা রসুন অনেক ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে। তবে, এটি সব ধরনের আঁচিলের জন্য উপযুক্ত নয় এবং দীর্ঘস্থায়ী আঁচিলের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জাহাজ পানিতে ভাসে কেন?

পৃথিবীর বাইরে আর কোন গ্রহে মানুষ বসতি স্থাপন করতে পারে কেন

ভূমিকম্প কেন হয়: কারণ ও প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।