সাইফ আলি খানের জীবনের ভয়াবহ রাত: ছুরিকাঘাত, মুক্তিপণ, এবং বিভীষিকার স্মৃতি

বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের জীবনের একটি রাত চিরদিনের জন্য তার মনে দাগ কেটে গেছে। ১৬ জানুয়ারির সেই রাতে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি তার বান্দ্রার বাসায় ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে। অভিনেতার স্ত্রী কারিনা কাপুর খান এবং তাদের ছোট ছেলে জেহ্‌-র ন্যানি ইলিয়াম ফিলিপের বয়ান থেকেও উঠে এসেছে সেই বিভীষিকাময় ঘটনার বিবরণ।

কী ঘটেছিল সেই রাতে?

সাইফ জানিয়েছেন, রাতের এক পর্যায়ে জেহ্‌-র চিৎকার শুনে তিনি নিচে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন তার ছোট ছেলের ন্যানি ইলিয়ামের সঙ্গে এক অজ্ঞাত ব্যক্তি ধস্তাধস্তি করছে। আততায়ী একটি ধারালো ছুরি হাতে নিয়েছিল। বিপদের গভীরতা বুঝতে পেরে সাইফ পেছন থেকে তাকে চেপে ধরেন।

সাইফের ভাষায়:
“জেহ্‌-র চিৎকার শুনে আমরা দ্রুত নিচে নেমে যাই। গিয়ে দেখি ন্যানি একজন অচেনা লোকের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে। আমি আততায়ীকে পেছন থেকে চেপে ধরলে সে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য আমাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকে। পিঠ, ঘাড়, এবং হাতে ছুরির আঘাত পাই আমি। ক্লান্ত হওয়ার পর শেষমেশ তাকে ধাক্কা দিয়ে একটি ঘরে আটকে দিই।”

এর মধ্যেই ন্যানি ইলিয়াম ছোট ছেলে জেহ্‌-কে কোলে তুলে নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যান। সাইফের শরীর থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।

আহত সাইফের চিকিৎসা

সাইফকে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার মেরুদণ্ডের কাছে বিঁধে থাকা ছুরির অংশ অপসারণ করা হয়। ঘাড় এবং বাহুর আঘাতের জন্য করা হয় প্লাস্টিক সার্জারি। পাঁচ দিনের চিকিৎসার পর ২১ জানুয়ারি তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়।

হামলার উদ্দেশ্য

পুলিশের তদন্তে জানা যায়, হামলাকারী শরিফুল ইসলাম শেহজাদ, সম্ভবত একজন বাংলাদেশি নাগরিক। তিনি চুরির উদ্দেশ্যে সাইফের বাড়িতে ঢুকেছিলেন। সাইফের ছোট ছেলে জেহ্‌-কে পণবন্দি করে ১ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করাই ছিল তার উদ্দেশ্য।

পুলিশ জানিয়েছে, শরিফুল ১১ তলা ফ্ল্যাটে ডাক্ট পাইপ বেয়ে উঠে এসেছিলেন। সাইফের ফ্ল্যাট থেকে সংগৃহীত আঙুলের ছাপ শরিফুলের সঙ্গে মিলে গেছে। ঘটনাস্থলের অন্যান্য জায়গা, যেমন—জেহ্‌-র ঘরের দরজা ও বাথরুমের হাতলের ছাপগুলোও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

সাইফের অনুভূতি

এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে সাইফ বলেছেন, “রাতের সেই বিভীষিকা আমাকে আজীবন তাড়া করে ফিরবে। আমার পরিবারকে রক্ষা করতে গিয়ে যা ঘটেছে, তা ভুলে যাওয়া অসম্ভব।”

এই ঘটনায় সাইফের সাহসিকতা এবং তার পরিবারের সহায়তা প্রশংসিত হলেও, পুরো ঘটনাটি বলিউড এবং ভক্তদের মধ্যে দাগ কেটে গেছে। পুলিশের তদন্ত এখনও চলমান, এবং অভিযুক্তের শাস্তির অপেক্ষায় রয়েছে সাইফের পরিবার।

Leave a Reply

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।