কোটা কী: ধারণা, ইতিহাস এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট
কোটা শব্দটি সাধারণত নির্দিষ্ট পরিমাণ বা অংশ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য সংরক্ষিত থাকে। বাংলাদেশে, বিশেষ করে সরকারি চাকরিতে, কোটা ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এই ব্লগে আমরা কোটা ব্যবস্থার ধারণা, ইতিহাস এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করব।

কোটা ব্যবস্থার সংজ্ঞা
কোটা হলো একটি নীতি বা ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সমাজের নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা শ্রেণির জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা সংরক্ষিত রাখা হয়। এটি সাধারণত সমাজের পিছিয়ে পড়া, সংখ্যালঘু বা সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর উন্নয়নের জন্য প্রয়োগ করা হয়। বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা প্রধানত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, যেখানে কিছু পদ নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত থাকে।
বাংলাদেশের কোটা ব্যবস্থার ইতিহাস
বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থার সূচনা হয় ১৯৭২ সালে, মুক্তিযুদ্ধের পরপরই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০% কোটা সংরক্ষণ করেন, যা তাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচিত হয়। পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে এই কোটা ব্যবস্থায় বিভিন্ন পরিবর্তন ও সংস্কার আনা হয়।
কোটা ব্যবস্থার বিবর্তন
- ১৯৭২: প্রথমবারের মতো কোটা ব্যবস্থা চালু হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০%, জেলা কোটা ৪০%, নারী কোটা ১০% এবং সাধারণ মেধার জন্য ২০% পদ সংরক্ষিত ছিল।
- ১৯৭৬: সাধারণ মেধার জন্য কোটা ২০% থেকে বাড়িয়ে ৪০% করা হয়, এবং জেলা কোটা ২০% করা হয়।
- ১৯৮৫: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সাধারণ মেধার জন্য কোটা ৪৫% করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%, জেলা কোটা ১০%, নারী কোটা ১০% এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ৫% কোটা সংরক্ষিত হয়।
- ২০০৯: জেলাভিত্তিক কোটা পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন
২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। তাদের প্রধান দাবিগুলো ছিল:
- কোটা ব্যবস্থা ১০% এ নামিয়ে আনা।
- কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধা তালিকা থেকে শূন্য পদ পূরণ করা।
- সরকারি চাকরিতে সবার জন্য অভিন্ন বয়সসীমা নির্ধারণ।
- কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ পরীক্ষা না নেওয়া।
- চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় একাধিকবার কোটার সুবিধা ব্যবহার না করা।
এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে।
বর্তমান প্রেক্ষাপট
সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি রায়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যা নিয়ে আবারও বিতর্ক শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছে, অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা কোটার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
কোটা ব্যবস্থার পক্ষে ও বিপক্ষে মতামত
পক্ষে:
- সমাজের পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর উন্নয়ন ও সমতা নিশ্চিত করা।
- মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি প্রদান।
- নারীদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণ বাড়ানো।
বিপক্ষে:
- মেধার অবমূল্যায়ন হওয়া।
- দীর্ঘ সময় ধরে কোটা ব্যবস্থা চালু থাকায় এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা।
- কোটার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগ।
কোটা আন্দোলন: একটি সার্বিক বিশ্লেষণ
কোটা আন্দোলন হলো বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য সামাজিক ও ছাত্র আন্দোলন, যা মূলত সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে শুরু হয়। এই আন্দোলন বেশ কয়েকবার দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচিত হয়েছে এবং এর প্রভাব দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিসরে গভীরভাবে পড়েছে। এটি ছাত্রসমাজ ও তরুণদের অংশগ্রহণে সংগঠিত একটি আন্দোলন হিসেবে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করেছে।
কোটা পদ্ধতি কী?
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট কোটা ব্যবস্থা বিদ্যমান। ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে বিভিন্ন শ্রেণির জন্য কোটা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়। এই কোটা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিল পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নিশ্চিত করা। তবে এই ব্যবস্থা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের মধ্যে অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশে কোটা পদ্ধতির আওতায় সরকারি চাকরিতে নির্দিষ্টভাবে নিম্নলিখিত কোটাগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল:
- মুক্তিযোদ্ধা কোটা: ৩০%
- নারী কোটা: ১০%
- ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা: ৫%
- জেলা কোটা: ১০%
- প্রতিবন্ধী কোটা: ১%
অন্যদিকে, বাকি ৪৪% চাকরি ছিল সাধারণ মেধার ভিত্তিতে।
কোটা আন্দোলনের পটভূমি
সরকারি চাকরিতে কোটার বিপুল পরিমাণ অংশ মুক্তিযোদ্ধা এবং অন্যান্য সংরক্ষিত শ্রেণির জন্য নির্ধারণ করা ছিল। এই পরিস্থিতি সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে একধরনের বৈষম্যের অনুভূতি তৈরি করে। বিশেষত, যারা সাধারণ মেধা তালিকা থেকে প্রতিযোগিতা করে চাকরি পেতে চায়, তারা মনে করে যে এই কোটা পদ্ধতি তাদের প্রতিযোগিতার সুযোগ সংকুচিত করে।
কোটা সংস্কারের দাবি কয়েক দশক ধরেই ছিল, তবে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে এ বিষয়ে বড় ধরনের আন্দোলন শুরু হয়।
কোটা আন্দোলনের শুরু এবং প্রবাহ
আন্দোলনের সূচনা:
২০১৮ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনটি ক্রমেই দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে আনে:
- অতিরিক্ত কোটার পরিমাণ: আন্দোলনকারীদের মতে, ৫৬% চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ করায় মেধাবীদের জন্য সুযোগ অনেক কমে যাচ্ছে।
- কোটার অপব্যবহার: অনেক ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটার আসন ফাঁকা থেকে যাচ্ছে বা এই কোটার সুবিধা সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
- সমান সুযোগের দাবি: শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, মেধার ভিত্তিতে সবাই যেন সমান সুযোগ পায়।
আন্দোলনের তীব্রতা:
- আন্দোলনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে শুরু হয় এবং পরে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
- শিক্ষার্থীরা ৫ দফা দাবি উত্থাপন করে, যার মধ্যে প্রধান দাবি ছিল কোটা পদ্ধতির সংস্কার বা বাতিল।
৫ দফা দাবি:
- কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ১০% সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
- কোটা না পূরণ হলে শূন্য পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
- কোটার কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া যাবে না।
- সরকারি চাকরির নিয়োগে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় সমান পাশ নম্বর থাকতে হবে।
- নিয়োগ পরীক্ষায় সব প্রার্থীর সমান সুযোগ থাকতে হবে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া:
- শুরুতে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে নমনীয় অবস্থান নেয় এবং বিষয়টি পর্যালোচনার জন্য আশ্বাস দেয়।
- তবে, আন্দোলন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এবং দমন-পীড়নের ঘটনাও ঘটে, যা আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তোলে।
কোটা আন্দোলনের ফলাফল
২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে ঘোষণা করেন যে কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল করা হবে। এটি আন্দোলনকারীদের জন্য একটি বড় সাফল্য ছিল। তবে পরবর্তীতে এই ঘোষণার প্রক্রিয়া এবং বাস্তবায়ন নিয়ে নানা প্রশ্ন ও বিতর্ক দেখা দেয়।
পরবর্তী পরিস্থিতি:
- সরকার একটি কমিটি গঠন করে কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনার জন্য।
- ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সরকারি সিদ্ধান্তে কোটা পদ্ধতি কার্যত বাতিল করা হয়, এবং চাকরির ক্ষেত্রে ১০% সংরক্ষণ রাখা হয় প্রতিবন্ধী এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য।
কোটা আন্দোলনের ইতিবাচক প্রভাব
- সমানাধিকারের আন্দোলন: এই আন্দোলন তরুণদের মধ্যে সমান সুযোগ এবং মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়ার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করে।
- তারুণ্যের শক্তি: এটি দেখিয়ে দেয় যে সঠিক দাবিতে ছাত্রসমাজ একত্রিত হলে তা জাতীয় নীতিমালায় পরিবর্তন আনতে পারে।
- সুশাসনের দাবি: আন্দোলন সরকারকে চাকরির ক্ষেত্রে সুশাসন এবং স্বচ্ছতার বিষয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
কোটা আন্দোলনের সমালোচনা
- পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রভাব: কোটা পদ্ধতি বাতিল হওয়ায় কিছু শ্রেণি, বিশেষত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, তাদের বিশেষ সুবিধা হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করে।
- বিরোধপূর্ণ বাস্তবায়ন: আন্দোলনের ফলাফল নিয়ে এখনও বিতর্ক রয়েছে, কারণ চাকরি ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন আনলেও তা কতটা সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
- সামাজিক বৈষম্য: কিছু বিশেষ শ্রেণির জন্য কোটা পদ্ধতির পরিবর্তন তাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে সমালোচকরা মনে করেন।
কোটা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে তারুণ্যের একটি শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি হিসেবে চিহ্নিত। এটি শুধু চাকরির ক্ষেত্রে মেধার স্বীকৃতি বা ন্যায্যতার দাবি নয়, বরং তরুণদের মধ্যে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং অধিকারের প্রশ্নে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। তবে কোটা পদ্ধতির সংস্কার বা বাতিলের ফলে সমাজের পিছিয়ে থাকা শ্রেণির উপর এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
কোটা আন্দোলনের ৯ দফা দাবি
২০১৮ সালে বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করেছিল, সেখানে মূলত ৯ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। এই দাবি ছিল কোটা পদ্ধতির সংস্কার বা পরিবর্তনের মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার জন্য। নিচে কোটা আন্দোলনের ৯ দফা দাবি উল্লেখ করা হলো:
১. কোটার পরিমাণ ৫৬% থেকে কমিয়ে ১০% করতে হবে।
সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান ৫৬% কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে তা কমিয়ে ১০%-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার দাবি করা হয়। আন্দোলনকারীরা যুক্তি দেন যে, অধিক পরিমাণ কোটা সাধারণ মেধা তালিকার প্রার্থীদের জন্য চাকরির সুযোগ সীমিত করে দিচ্ছে।
২. কোটার শূন্যপদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
যদি কোটার আওতায় থাকা কোনো পদ পূরণ করা সম্ভব না হয়, তবে সেই শূন্যপদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে—এই দাবিটি ছিল আন্দোলনের অন্যতম প্রধান পয়েন্ট।
৩. বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাধারীদের অতিরিক্ত সুযোগ দেওয়া যাবে না।
আন্দোলনকারীরা দাবি করেন, চাকরির পরীক্ষায় কোটাধারীদের জন্য কোনও ধরনের অতিরিক্ত সুবিধা বা নম্বর বরাদ্দ করা যাবে না। বিশেষ সুবিধার কারণে প্রতিযোগিতায় বৈষম্য সৃষ্টি হয় বলে তারা উল্লেখ করেন।
৪. চাকরির ক্ষেত্রে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।
চাকরির ক্ষেত্রে মেধা এবং প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি করা হয়। বিশেষ করে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনও ধরনের বৈষম্য তৈরি করা যাবে না।
৫. মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সন্তানদের জন্য কোটা বাতিল করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের জন্য চাকরিতে কোটা বরাদ্দের ব্যবস্থা বাতিল করার দাবি জানানো হয়। তাদের যুক্তি ছিল, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই সুবিধা দেওয়ার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই।
৬. চাকরির আবেদনে কোনও ধরনের কোটা ফি মওকুফ রাখা যাবে না।
চাকরির আবেদনের ক্ষেত্রে সাধারণ প্রার্থীদের মতো কোটাধারী প্রার্থীদেরও একই পরিমাণ ফি জমা দিতে হবে। এখানে কোনও প্রকার ছাড় বা মওকুফ রাখা যাবে না বলে দাবি করা হয়।
৭. কোটার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সঠিক যাচাই-বাছাই করতে হবে।
যে সব প্রার্থীদের জন্য কোটা বরাদ্দ করা হচ্ছে, তাদের যোগ্যতা এবং প্রামাণ্য তথ্য সঠিকভাবে যাচাই করা হবে। যাতে করে কোটার সুবিধা সঠিক ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছে যায় এবং কোনো অনিয়ম না হয়।
৮. চাকরির ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে।
কোনও ধরনের কোটার কারণে মেধাবী প্রার্থীদের চাকরি পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। আন্দোলনকারীরা চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে সমান সুযোগ প্রদানের জন্য জোর দাবি জানান।
৯. কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি সংস্কার বা বাতিল করতে হবে।
কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি সংস্কার করা, এবং প্রয়োজন হলে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করার দাবি তোলা হয়। আন্দোলনকারীদের মতে, এটি বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অপ্রাসঙ্গিক এবং চাকরির ক্ষেত্রে এটি বৈষম্য সৃষ্টি করছে।
কোটা আন্দোলনের এই ৯ দফা দাবি বাংলাদেশের তরুণ ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে। দাবি অনুযায়ী, আন্দোলনকারীরা একটি ন্যায্য ও সমতাভিত্তিক চাকরির পরিবেশ চেয়েছিল, যেখানে মেধাই হবে প্রধান নিয়ামক। এই দাবিগুলো দেশের চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল এবং সরকারের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।
কোটা ব্যবস্থা বাংলাদেশের সমাজে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে। তবে সময়ের সাথে সাথে এর প্রয়োজনীয়তা ও কার্যকারিতা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সমাজের সকল শ্রেণির সমতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন। সরকারের উচিত সকল পক্ষের মতামত নিয়ে একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা, যা সমাজের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।