rizik-briddhir-dua

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া ও আমল: কুরআন ও হাদিসের আলোকে কার্যকরী উপায়

রিজিক বা জীবনোপকরণ এর একমাত্র মালিক মহান আল্লাহ তা’আলা। তিনি যাকে ইচ্ছা অগণিত রিজিক দান করেন। তবে একজন মুমিন হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো আল্লাহর কাছে চাওয়া এবং তাঁর নির্দেশিত পথে চেষ্টা করা। এই পোস্টে আমরা রিজিক বৃদ্ধির জন্য কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত সবচেয়ে শক্তিশালী দোয়া ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে জানব।

রিজিক বৃদ্ধির সবচেয়ে কার্যকরী দোয়া

হাদিসে রিজিকের অনটন দূর করার জন্য বিভিন্ন দোয়া ও আমলের কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি কার্যকরী দোয়া হলো যা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের শিখিয়েছেন।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফি’আ, ওয়া রিযকান ত্বইয়িবা, ওয়া আমালান মুতাক্বাব্বালা।
বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী জ্ঞান, পবিত্র রিজিক এবং কবুলযোগ্য আমল প্রার্থনা করছি।
(সূত্র: সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৯২৫)

এই দোয়াটি প্রতিদিন সকালে ফজর নামাজের পর পাঠ করা সুন্নত। এতে শুধু রিজিকই নয়, বরং উপকারী জ্ঞান ও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য আমলের জন্যও প্রার্থনা করা হয়, যা জীবনের সার্বিক বরকতের জন্য অপরিহার্য।

রিজিক বৃদ্ধির জন্য ৭টি প্রমাণিত আমল

শুধুমাত্র দোয়া করাই যথেষ্ট নয়, এর পাশাপাশি কিছু আমল বা কাজ রয়েছে যা রিজিকের দরজা খুলে দিতে সাহায্য করে। নিচে কুরআন ও হাদিসের আলোকে এমন ৭টি আমল উল্লেখ করা হলো:

  1. তাকওয়া অবলম্বন করা (আল্লাহকে ভয় করা): জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলাই হলো তাকওয়া। আল্লাহ তা’আলা কুরআনে ওয়াদা করেছেন, “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিজিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না।” (সূরা আত-তালাক: ২-৩)
  2. বেশি বেশি ইস্তেগফার করা: গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ রিজিকের দরজা খুলে দেন। নূহ (আ.) তাঁর জাতিকে বলেছিলেন, “তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর মুষলধারে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, আর তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন।” (সূরা নূহ: ১০-১২)
  3. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা: আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্ক রাখা রিজিক বৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি চায় যে তার রিজিক প্রশস্ত হোক এবং তার আয়ু বৃদ্ধি হোক, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে।” (সহিহ বুখারি)
  4. আল্লাহর উপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল (ভরসা) রাখা: চেষ্টার পাশাপাশি ফলাফলের জন্য আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখতে হবে। হাদিসে আছে, “তোমরা যদি আল্লাহর ওপর যথাযথ ভরসা করতে, তাহলে তিনি তোমাদেরকে পাখির মতো রিজিক দান করতেন। পাখিরা সকালে খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে ফিরে আসে।” (তিরমিজি)
  5. দান-সদকা করা: আল্লাহর পথে ব্যয় করলে সম্পদ কমে না, বরং আল্লাহ তা বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। আল্লাহ বলেন, “যারা আল্লাহর পথে নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যবীজের মতো, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশ শস্যদানা।” (সূরা আল-বাকারা: ২৬১)
  6. সর্বদা পাক-পবিত্র থাকা: শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা আল্লাহর রহমত আকর্ষণ করে। পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ এবং এটি বরকতের কারণ। তাই আমাদের ওযুর কারণগুলো জেনে সতর্ক থাকা উচিত। পবিত্র থাকলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং কাজে মনোযোগ আসে।
  7. কুরআনের বিশেষ সূরা ও আয়াত পাঠ: কিছু সূরা ও আয়াত পাঠে বিশেষ ফজিলত রয়েছে। যেমন, সূরা ওয়াক্বিয়াকে ‘প্রাচুর্যের সূরা’ বলা হয়। একইভাবে, আয়াতুল কুরসির ফজিলত অপরিসীম। নিয়মিত আমল হিসেবে এসব পাঠ করা এবং রাতে ঘুমানোর আগে আমল করা রিজিকের বরকতের অন্যতম মাধ্যম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া কখন পড়া উত্তম?

উল্লেখিত দোয়াটি (আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা…) ফজর নামাজের পর পড়া উত্তম। তবে যেকোনো সময়, বিশেষ করে দোয়া কবুলের সময়গুলোতে, যেমন- তাহাজ্জুদের সময়, আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময় এবং জুমার দিনে এই দোয়া করা যেতে পারে।

শুধু দোয়া করলেই কি রিজিক বাড়বে?

না, দোয়ার পাশাপাশি হালাল পথে চেষ্টা ও পরিশ্রম করা আবশ্যক। ইসলামে কর্মবিমুখতাকে সমর্থন করা হয় না। দোয়া হলো চেষ্টার সাথে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার মাধ্যম। উপরে বর্ণিত আমলগুলো মেনে চলার সাথে সাথে নিজের সাধ্যমতো কাজ করে যেতে হবে।

রিজিক বলতে কি শুধু অর্থ বোঝায়?

না, রিজিক একটি ব্যাপক ধারণা। অর্থ, সম্পদ, খাদ্য, স্বাস্থ্য, জ্ঞান, সুযোগ, সময়, এবং নেক সন্তান—এই সবকিছুই রিজিকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর কাছে দোয়া করার সময় আমাদের সার্বিক রিজিকের জন্য প্রার্থনা করা উচিত।

উপসংহার: রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনি তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা করার জন্য কখনও রিজিক সংকুচিত করেন, আবার কখনও প্রশস্ত করেন। আমাদের কাজ হলো ধৈর্য, শুকরিয়া, দোয়া এবং হালাল পথে চেষ্টার মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে প্রশস্ত ও পবিত্র রিজিক দান করুন। আমিন।

Leave a Comment

Scroll to Top