গ্যাসের দাম বাড়লে পোশাক খাতে বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচ: ব্যবসায়ীদের শঙ্কা

বাংলাদেশের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যদি শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাব গ্যাসের দাম বাড়লে পোশাক খাতে বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত খরচ: ব্যবসায়ীদের শঙ্কা

বাংলাদেশের পোশাক ও টেক্সটাইল শিল্পের খরচ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যদি শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের মতে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর এই প্রস্তাব কার্যকর হলে পোশাক শিল্পের ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোতে বছরে অতিরিক্ত ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। এর ফলে শিল্পায়ন ও অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এই উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন পোশাক ও টেক্সটাইল খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা।

গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ও সম্ভাব্য প্রভাব

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী সরকার শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্য প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১৫০ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৫ টাকা করার পরিকল্পনা করছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ধরনের মূল্য বৃদ্ধি কার্যকর হলে এটি রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

গ্যাসের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ), এবং টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনসহ (বিটিএমএ) বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের চিঠিতে বলেছেন, এই অতিরিক্ত খরচ রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪ দশমিক ২ শতাংশ হয়ে দাঁড়াবে, যা খাতের জন্য ভয়াবহ হতে পারে।

পোশাক খাতের বিদ্যমান সংকট

করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার পর থেকেই দেশের পোশাক শিল্প বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি এবং আমদানি-রপ্তানিতে ধীরগতির কারণে শিল্পে ইতোমধ্যেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশি পোশাকের আমদানি মূল্য যথাক্রমে ৪.২৪ শতাংশ এবং ৪.৮৩ শতাংশ কমে গেছে। এর ফলে রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

পাশাপাশি, ২০২৩ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি এবং ব্যাংক ঋণের সুদহার ১৪-১৫ শতাংশে পৌঁছানোর ফলে কারখানার উৎপাদন খরচও বেড়ে গেছে। এর মধ্যে যদি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে তা শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতার ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে।

গ্যাসের সংকট ও প্রভাব

গ্যাসের সংকট বর্তমানে পোশাক শিল্পের জন্য একটি বড় সমস্যা। নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ও ময়মনসিংহের মতো শিল্প এলাকাগুলোতে গ্যাসের অপর্যাপ্ত চাপের কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ৫০-৬০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে প্রোডাকশন শিডিউল এবং সরবরাহ চেইনে বিঘ্ন ঘটছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পোশাক শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ৮.৯৫ শতাংশ এবং বস্ত্র খাতের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি ১৮.১১ শতাংশ কমেছে। ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি এই অবস্থাকে আরও খারাপ করবে।

ব্যবসায়ীদের দাবিসমূহ

পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা সরকারকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পরিকল্পনা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা দাবি করেন:

  1. শিল্পখাত ও ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর জন্য গ্যাসের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
  2. সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করার বিকল্প ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
  3. গ্যাস সংকট নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

পোশাক ও টেক্সটাইল খাত দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস এবং অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। এই খাতে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির মতো সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সরকার ও নীতিনির্ধারকদের উচিত শিল্প সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি যৌক্তিক ও টেকসই সমাধানে পৌঁছানো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *