মহিলাদের তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম: বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত
তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামের একটি বিশেষ ইবাদত, যা গভীর রাতে আদায় করা হয়। এটি একটি নফল নামাজ হলেও এর ফজিলত অত্যন্ত বেশি। বিশেষ করে মহিলাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ একটি অসাধারণ ইবাদতের সুযোগ, যা তাদের আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে সাহায্য করে।
এই নিবন্ধে আমরা মহিলাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, ফজিলত, এবং তা আদায় করার পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
তাহাজ্জুদ নামাজ আল্লাহর প্রিয় ইবাদত। এটি গভীর রাতে আদায় করা হয়, যখন সবকিছু শান্ত এবং নিস্তব্ধ। এই সময় আল্লাহর সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর একটি বিশেষ সুযোগ হয়।
কুরআনে তাহাজ্জুদ নামাজের উল্লেখ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় কর। এটি তোমার জন্য একটি অতিরিক্ত (ইবাদত)। আশা করা যায়, তোমার প্রভু তোমাকে প্রশংসিত স্থানে উন্নীত করবেন।”
(সূরা আল-ইসরা: ৭৯)
হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“তোমরা রাতে নামাজ আদায় করো। কারণ এটি ছিল তোমাদের পূর্ববর্তী নেককার লোকদের অভ্যাস, যা তোমাদের প্রভুর নৈকট্য অর্জনে সহায়ক এবং পাপ মোচন করে।”
(তিরমিজি)
মহিলাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত
মহিলারা ঘরের কাজকর্ম এবং পরিবারের দায়িত্ব পালন করতে ব্যস্ত থাকেন। তবে তাহাজ্জুদ নামাজ তাদের জন্য বিশেষ একটি ইবাদত, যা মানসিক প্রশান্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সাহায্য করে।
- আল্লাহর নৈকট্য অর্জন: তাহাজ্জুদ নামাজ মহিলাদের আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে সহায়তা করে।
- পাপ মোচন: এটি পাপ মোচনের একটি বিশেষ মাধ্যম।
- দোয়া কবুলের সময়: গভীর রাতে আদায় করা নামাজে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- আধ্যাত্মিক শান্তি: তাহাজ্জুদ নামাজ আত্মাকে শান্তি এবং মনকে প্রশান্তি দেয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম
১. নিয়ত
তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য আগে থেকে কোনো নির্দিষ্ট নিয়ত করা প্রয়োজন নেই। রাতের কোনো এক অংশে ঘুম থেকে উঠে এই নামাজ আদায় করতে হয়।
২. সময়
তাহাজ্জুদ নামাজ গভীর রাতে আদায় করা হয়। এটি ইশার নামাজের পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আদায় করা যায়। তবে ফজরের আগের অংশ, অর্থাৎ শেষ তৃতীয়াংশ, সবচেয়ে উত্তম।
৩. ওজু
তাহাজ্জুদ নামাজের আগে অবশ্যই পবিত্র থাকতে হবে। ওজু করে নামাজে দাঁড়াতে হবে।
৪. রাকাত সংখ্যা
তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দিষ্ট রাকাত নেই। তবে এটি কমপক্ষে ২ রাকাত এবং সর্বোচ্চ ৮ বা ১২ রাকাত পর্যন্ত আদায় করা যায়।
৫. তিলাওয়াত এবং দোয়া
নামাজে ধীরস্থিরভাবে সুরা পড়া এবং রুকু ও সিজদায় দীর্ঘ সময় ধরে দোয়া করা উত্তম। সিজদায় নিজের মনের কথা আল্লাহর কাছে খুলে বলুন।
তাহাজ্জুদ নামাজের পদ্ধতি
মহিলারা নিচের ধাপে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন:
- ইশার নামাজ আদায় করা: ইশার নামাজ পড়ে ঘুমানোর নিয়ত করুন।
- ঘুম থেকে উঠা: গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে ওজু করে নামাজের প্রস্তুতি নিন।
- ২ রাকাত করে পড়া: প্রথমে ২ রাকাত সুন্নত আদায় করুন। এরপর আপনার ইচ্ছামতো আরও রাকাত পড়তে পারেন।
- সিজদায় দোয়া করা: নামাজ শেষে সিজদায় গিয়ে নিজের এবং পরিবারের জন্য দোয়া করুন।
- উত্তম সময়: শেষ রাতে ফজরের আজানের আগে নামাজ শেষ করার চেষ্টা করুন।
তাহাজ্জুদ নামাজের বিশেষ দিক
১. রাত্রি জাগরণ
মহিলারা ঘরের কাজ শেষ করার পর রাতে তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য কিছু সময় রাখতে পারেন। এটি তাদের ইবাদতে নিয়মিত হতে সাহায্য করবে।
২. আলোর ব্যবহার
তাহাজ্জুদ নামাজে আলো কম রাখুন, যাতে একটি শান্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এটি মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. পরিবারের জন্য দোয়া
তাহাজ্জুদ নামাজে নিজের জন্য দোয়া করার পাশাপাশি স্বামী, সন্তান, এবং পরিবারের জন্য দোয়া করুন।
৪. বিশেষ সুরা তিলাওয়াত
তাহাজ্জুদ নামাজে আপনি সুরা আল-ইখলাস, সুরা আল-ফালাক, এবং সুরা আন-নাস পড়তে পারেন। এগুলো ছোট এবং সহজ।
তাহাজ্জুদ নামাজ এবং আধুনিক জীবনের প্রভাব
মহিলাদের জন্য তাহাজ্জুদ নামাজ একটি মানসিক শক্তি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির মাধ্যম হতে পারে। আধুনিক জীবনের চাপে অনেকেই মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন। তাহাজ্জুদ নামাজ মানসিক শান্তি আনে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতি করতে সাহায্য করে।
মহিলাদের জন্য কিছু পরামর্শ
- সময় নির্ধারণ করুন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটি সময় নির্ধারণ করুন।
- সহজ শুরু করুন: শুরুতে কম রাকাত পড়ে ধীরে ধীরে অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- সহজ পোশাক পরুন: নামাজের জন্য পবিত্র এবং আরামদায়ক পোশাক ব্যবহার করুন।
- পরিবারকে উদ্বুদ্ধ করুন: পরিবারের অন্য সদস্যদেরও তাহাজ্জুদ নামাজে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করুন।
ইসলামিক দৃষ্টিতে তাহাজ্জুদ নামাজ
ইসলামের দৃষ্টিতে তাহাজ্জুদ নামাজ একটি বিশেষ ইবাদত। এটি নফল হলেও আল্লাহর প্রিয়। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এবং সাহাবীগণ নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।
কুরআনের নির্দেশনা
আল্লাহ বলেন:
“যারা রাত্রি জাগরণ করে নামাজ আদায় করে, তাদের জন্য আমি পুরস্কার রেখেছি।”
(সূরা আল-যুমার: ৯)
হাদিসের ফজিলত
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন:
“তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ো। এটি জান্নাতের পথ প্রশস্ত করে।”
(মুসলিম)
তাহাজ্জুদ নামাজ মহিলাদের জন্য একটি অসাধারণ ইবাদত। এটি তাদের জীবনে আধ্যাত্মিক উন্নতি, মানসিক প্রশান্তি, এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার মাধ্যমে মহিলারা তাদের ইমান মজবুত করতে এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত অর্জন করতে পারেন।
মহিলাদের ঈদের নামাজ: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি
ইসলামে ঈদের নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি উম্মাহর ঐক্য, আনন্দ, এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতীক। তবে, অনেক সময় মহিলাদের ঈদের নামাজ সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে—তারা কি ঈদের নামাজ পড়তে পারবেন বা এটি তাদের জন্য বাধ্যতামূলক কি না? এই ব্লগে আমরা কুরআন, হাদিস, এবং ইসলামী ফিকহের আলোকে মহিলাদের ঈদের নামাজের বিষয়ে বিশদ আলোচনা করব।
ঈদের নামাজের গুরুত্ব
ঈদের নামাজ ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা দুই ঈদে—ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা—পড়া হয়। এটি সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ এটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে পালনীয় সুন্নত। ইসলামে নারী ও পুরুষ উভয়কেই ইবাদতের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
কুরআন ও হাদিসের আলোকে মহিলাদের ঈদের নামাজ
১. কুরআনের দৃষ্টিকোণ:
কুরআনে ঈদের নামাজ সম্পর্কে সরাসরি উল্লেখ নেই। তবে, ইবাদত ও আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আহ্বান কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এসেছে। এটি নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য:
“তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং জাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহর প্রতি অবনত হও।” (সূরা বাকারা: ৪৩)
২. হাদিসের আলোকে:
হাদিসে ঈদের নামাজে মহিলাদের অংশগ্রহণের বিষয়ে পরিষ্কার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হজরত উম্মে আতিয়্যাহ (রা.) থেকে বর্ণিত:
“নবী করিম (সা.) আমাদের আদেশ দিয়েছিলেন যে, আমরা ঈদের নামাজে বের হবো—অল্পবয়স্ক মেয়েরা, পর্দানশীন নারীরা এবং ঋতুমতী মহিলারা। ঋতুমতী মহিলারা শুধু নামাজে অংশগ্রহণ করবে না, তবে তারা ঈদের দোয়া ও মুসলিমদের একত্রিত হওয়ার মুহূর্তে উপস্থিত থাকবে।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়:
- ঈদের নামাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ সুন্নত।
- ঋতুমতী মহিলারা নামাজে অংশ না নিলেও ঈদের সমাবেশে উপস্থিত হতে পারেন।
ফিকহ বা ইসলামি আইন অনুযায়ী নির্দেশনা
ইসলামী ফিকহে মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বিভিন্ন মাজহাবের মত অনুযায়ী এর গুরুত্ব আলাদা:
১. হানাফি মাজহাব:
হানাফি মাজহাবে মহিলাদের ঈদের নামাজ বাধ্যতামূলক নয়। তবে তারা বাড়িতে নামাজ আদায় করতে পারেন।
২. শাফিই ও মালিকি মাজহাব:
এই মাজহাবে ঈদের নামাজে নারীদের অংশগ্রহণ উৎসাহিত করা হয়েছে। যদি তারা পর্দা রক্ষা করে এবং নিরাপদে ঈদগাহে যেতে পারেন, তবে তাদের জন্য এটি সুন্নত।
৩. হাম্বলি মাজহাব:
হাম্বলি মাজহাবেও মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়া সুন্নত হিসেবে বিবেচিত।
মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার উপায়
যদি মহিলারা ঈদের নামাজে অংশ নিতে চান, তবে তাদের জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা উচিত:
- পর্দা: ইসলামি নির্দেশনা অনুযায়ী পর্দা বজায় রাখতে হবে।
- নিরাপত্তা: ঈদগাহে যাওয়ার সময় ও স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
- সম্মিলিত জামাতে অংশগ্রহণ: মহিলারা পুরুষদের পেছনে বা আলাদা একটি স্থানে নামাজ পড়তে পারেন।
- পরিবেশের সম্মান বজায় রাখা: ঈদের সমাবেশে শালীন আচরণ বজায় রাখা এবং ইসলামি আদর্শ অনুসরণ করা উচিত।
মহিলাদের জন্য বাড়িতে ঈদের নামাজ
যদি মহিলারা ঈদগাহে না যেতে পারেন, তবে তারা বাড়িতেও ঈদের নামাজ পড়তে পারেন। তবে বাড়িতে পড়লে ঈদগাহের জামাতের মতো খুতবা শোনা আবশ্যক নয়। দুই রাকাত নামাজ পড়ার নিয়ম নিচে দেওয়া হলো:
- প্রথম রাকাতে ৬ তাকবির।
- দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবির।
- নামাজের পর দোয়া ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা।
মহিলাদের ঈদের নামাজ ইসলামে অনুমোদিত এবং এটি তাদের জন্য সুন্নত। তারা চাইলে ঈদগাহে গিয়ে জামাতে অংশ নিতে পারেন অথবা বাড়িতে নামাজ পড়তে পারেন। ইসলামের মূল শিক্ষা হলো আল্লাহর প্রতি ইবাদত ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, যা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। ঈদের নামাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ তাদের ইবাদতের সৌন্দর্য বাড়ায় এবং ঈদের আনন্দকে আরও পূর্ণ করে।
মাসিক অবস্থায় মহিলাদের নামাজ ও রোজার বিধান: ইসলামের নির্দেশনা
ইসলামে নামাজ এবং রোজা প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে, মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক (ঋতুস্রাব) এবং সন্তান জন্মদানের পর (নিফাস) অবস্থায় কিছু নির্দিষ্ট বিধান রয়েছে। এই অবস্থায় শরিয়তের কিছু বিধান মেনে চলা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। এই ব্লগে আমরা মাসিক অবস্থায় মহিলাদের নামাজ ও রোজার বিধান নিয়ে আলোচনা করব।
১. মাসিক অবস্থায় নামাজ
নিষিদ্ধতা:
মহিলারা মাসিক অবস্থায় নামাজ পড়তে পারবেন না। এটি ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন:
“আমরা (মহিলারা) মাসিক অবস্থায় নামাজ আদায় করতাম না এবং তা কাযা করতে বলা হয়নি।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
কারণ:
- মাসিক অবস্থায় নামাজ নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো এটি একটি শারীরিক অবস্থা, যেখানে নামাজের জন্য পবিত্রতা (তাহারাত) নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
কাযা করার প্রয়োজন নেই:
মাসিক অবস্থায় যে নামাজগুলো মহিলারা পড়তে পারেন না, তা পরে কাযা করার প্রয়োজন নেই। এটি ইসলামের বিশেষ একটি সহজতা, যা আল্লাহর রহমতের প্রতিফলন।
২. মাসিক অবস্থায় রোজা
রোজা পালন নিষিদ্ধ:
মাসিক অবস্থায় মহিলাদের জন্য রোজা পালন করা নিষিদ্ধ।
হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন:
“আমাদের (মহিলাদের) রোজা কাযা করতে বলা হতো, কিন্তু নামাজ কাযা করতে বলা হতো না।” (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)
কাযা রোজা রাখার বিধান:
- মাসিকের কারণে যে রোজাগুলো পালন করা হয় না, সেগুলো পরবর্তী সময়ে কাযা করতে হবে।
- এই কাযা রোজা পরে সুবিধামতো সময়ে রাখা যায়। তবে ঈদের দিন বা তাশরিকের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ।
৩. মাসিক অবস্থায় অন্যান্য ইবাদত
নামাজ ও রোজা ছাড়া মাসিক অবস্থায় মহিলারা অন্যান্য ইবাদত করতে পারেন:
- দোয়া: আল্লাহর কাছে দোয়া করা।
- জিকির: আল্লাহর নাম স্মরণ করা।
- তাওবা ও ইস্তিগফার: পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা।
- ইসলামী শিক্ষা: কুরআনের তাফসির ও হাদিস অধ্যয়ন।
- সদকা: দান-খয়রাত করা।
৪. মাসিক অবস্থায় কুরআন স্পর্শ ও তিলাওয়াত
কুরআন স্পর্শ:
- ইসলামে মাসিক অবস্থায় কুরআন স্পর্শ করা নিষিদ্ধ। তবে, মহিলারা গ্লাভস বা অন্য কোনো মাধ্যম ব্যবহার করে কুরআন স্পর্শ করতে পারেন।
কুরআন তিলাওয়াত:
- মাসিক অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা নিয়ে মতভেদ রয়েছে।
- অনেক আলেম বলেন, কুরআন মুখস্থ পাঠ করা বা স্মার্টফোন/কম্পিউটার ব্যবহার করে পড়া বৈধ।
৫. মাসিক অবস্থার বিধান ইসলামে সহজতা ও সম্মানের প্রতীক
ইসলামের এই বিধানগুলো মহিলাদের জন্য আল্লাহর বিশেষ দয়া এবং সহজতা প্রদর্শন করে। এটি কোনো কঠোরতা নয়, বরং তাদের শারীরিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব হালকা করার একটি পথ।
মাসিক অবস্থায় মহিলাদের জন্য নামাজ পড়া নিষিদ্ধ, তবে নামাজ কাযা করার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, মাসিক অবস্থায় রোজা রাখা নিষিদ্ধ, কিন্তু পরে সেই রোজাগুলো কাযা করতে হয়। ইসলামের এই বিধানগুলো মহিলাদের প্রতি আল্লাহর দয়া এবং মানবিকতার উদাহরণ। আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য সহজতা চান এবং তাদের জীবনে ভার চাপাতে চান না।
মহিলাদের জুমার নামাজ কত রাকাত?
ইসলামে জুমার নামাজ প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষের জন্য ফরজ, তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি ঐচ্ছিক। অর্থাৎ, মহিলারা চাইলে জুমার নামাজ পড়তে পারেন, আবার চাইলে না পড়ে ঘরে সাধারণ জোহরের নামাজও পড়তে পারেন। যদি কোনো মহিলা জুমার নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে নিচে তার জন্য প্রয়োজনীয় রাকাত ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত দেওয়া হলো:
১. জুমার নামাজের রাকাত
মহিলারা যদি মসজিদে গিয়ে জামাতে জুমার নামাজ পড়েন, তাহলে তাদের জন্য নামাজের রাকাত হবে:
ফরজ রাকাত:
- জুমার নামাজের মূল ফরজ ২ রাকাত। এটি ইমামের নেতৃত্বে জামাতে আদায় করতে হবে।
সুন্নত রাকাত (জামাতে নামাজের আগে ও পরে):
মহিলারা জুমার নামাজ পড়ার সময় সুন্নতের নিয়ম মেনে পড়বেন:
- জুমার আগে ৪ রাকাত সুন্নত:
জামাতে ফরজ নামাজের আগে মহিলারা ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়বেন। - জুমার পরে ৪ রাকাত সুন্নত (বা ২ রাকাত):
জুমার ফরজ নামাজের পরে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া উত্তম। তবে কেউ চাইলে ২ রাকাতও পড়তে পারেন।
২. মোট রাকাতের হিসাব
যদি কোনো মহিলা মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ পড়েন, তাহলে তার জন্য নামাজের মোট রাকাত হবে:
- ৪ রাকাত সুন্নত (জুমার আগে)
- ২ রাকাত ফরজ (ইমামের সঙ্গে)
- ৪ রাকাত সুন্নত (জুমার পরে, ঐচ্ছিকভাবে ২ রাকাতও হতে পারে)
মোট রাকাত: ১০ বা ৮ রাকাত।
৩. ঘরে জোহরের নামাজ পড়লে
যদি কোনো মহিলা ঘরে জুমার পরিবর্তে জোহরের নামাজ পড়েন, তাহলে নামাজের রাকাত হবে:
- ৪ রাকাত ফরজ জোহরের জন্য।
- ২ রাকাত সুন্নত (ফরজের আগে)।
- ২ রাকাত সুন্নত (ফরজের পরে)।
- ঐচ্ছিক ২ রাকাত নফল।
মোট রাকাত: ১০ রাকাত।
৪. জুমার নামাজ মহিলাদের জন্য ফরজ কি না?
মহিলাদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ নয়। এটি তাদের জন্য ঐচ্ছিক। ইসলাম তাদের ঘরে নামাজ পড়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে, মসজিদে গেলে এবং জামাতে অংশ নিলে, তারা জুমার নামাজের পূর্ণ সওয়াব পাবেন।
মহিলারা চাইলে মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ জামাতে পড়তে পারেন, যেখানে ফরজ নামাজ হবে ২ রাকাত। এর পাশাপাশি তারা সুন্নত নামাজ আদায় করতে পারবেন। তবে, ঘরে থাকলে জুমার পরিবর্তে জোহরের নামাজ পড়া যথেষ্ট। ইসলাম মহিলাদের জন্য এই বিষয়ে সহজতা দিয়েছে, এবং এটি তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।
আপনার যদি আরও কোনো প্রশ্ন থাকে, জানাতে পারেন!
এক্সটার্নাল লিঙ্কস:
- Tahajjud Prayer: Importance and How to Pray – IslamQA
- Virtues of Tahajjud Prayer – About Islam
- The Significance of Night Prayers – Islamic Relief