পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া: কি কি লাগবে এবং কিভাবে করবেন
পাসপোর্ট একজন ব্যক্তির আন্তর্জাতিক পরিচয়পত্র। এটি বিদেশ ভ্রমণের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বাংলাদেশে পাসপোর্ট করতে হলে বেশ কিছু ধাপ ও ডকুমেন্টসের প্রয়োজন হয়। এই নিবন্ধে আমরা আলোচনা করব পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয়তা, প্রক্রিয়া, এবং দরকারি ডকুমেন্টসমূহ।

পাসপোর্টের ধরন
বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়:
- অর্ডিনারি পাসপোর্ট (Regular Passport)
- অফিশিয়াল এবং কূটনৈতিক পাসপোর্ট (Official and Diplomatic Passport)
অর্ডিনারি পাসপোর্ট সাধারণ জনগণের জন্য প্রযোজ্য, যেখানে অফিসিয়াল এবং কূটনৈতিক পাসপোর্ট বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তাদের প্রদান করা হয়।
পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
পাসপোর্টের জন্য কিছু নির্দিষ্ট ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। নিচে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
পূর্ণাঙ্গ জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট (অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের জন্য) জমা দিতে হবে। - জন্ম নিবন্ধন সনদ
বিশেষ করে যারা ১৮ বছরের নিচে, তাদের জন্য এটি বাধ্যতামূলক। - পাসপোর্ট সাইজের ছবি
নির্দিষ্ট মাপের ২ কপি ছবি। এটি অবশ্যই সাদা পেছনের রঙে হতে হবে। - পিতা-মাতার এনআইডি কপি
১৮ বছরের নিচে আবেদনকারীর জন্য পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দরকার। - চারিত্রিক সনদ
বিশেষ ক্ষেত্রে চারিত্রিক সনদের প্রয়োজন হতে পারে। - বিদেশি নাগরিকদের জন্য বিশেষ অনুমতি
বিদেশি নাগরিক হলে স্থানীয় অভিবাসন অফিস থেকে অনুমতি প্রয়োজন।
পাসপোর্ট তৈরির ধাপসমূহ
পাসপোর্ট করতে হলে আপনাকে ধাপে ধাপে নিচের প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করতে হবে:
১. আবেদনপত্র পূরণ
পাসপোর্টের জন্য প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশ পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.epassport.gov.bd) গিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হয়।
২. ফি প্রদান
পাসপোর্ট তৈরির জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। নিচে সাধারণ পাসপোর্ট তৈরির জন্য ফি-এর বিবরণ দেওয়া হলো:
- সাধারণ প্রসেসিং (২০ কার্যদিবস): ৩,৪৫০ টাকা।
- জরুরি প্রসেসিং (১০ কার্যদিবস): ৬,৯০০ টাকা।
- সুপার জরুরি প্রসেসিং (৫ কার্যদিবস): ১০,৩৫০ টাকা।
ফি প্রদানের জন্য ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. বায়োমেট্রিক এবং ফটোগ্রাফি
আবেদনপত্র জমা দেওয়ার পর, নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং ছবি তুলতে হবে। এটি আপনার পরিচয়ের সঠিকতা যাচাইয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৪. আবেদনপত্র যাচাই এবং প্রক্রিয়াকরণ
আপনার জমা দেওয়া ডকুমেন্টগুলো যাচাই করার পর পাসপোর্ট অফিস আপনার আবেদন প্রক্রিয়াকরণ শুরু করবে।
৫. পাসপোর্ট সংগ্রহ
নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট প্রস্তুত হলে আপনাকে মেসেজ বা ফোন কলের মাধ্যমে জানানো হবে। পাসপোর্ট সংগ্রহের সময় নিজের পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।
সাধারণ ভুল এবং পরামর্শ
পাসপোর্ট আবেদনের সময় অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করেন। এগুলো এড়ানোর জন্য নিচের পরামর্শগুলো মেনে চলুন:
- ভুল তথ্য প্রদান করবেন না:
সব তথ্য সঠিক এবং প্রমাণিত ডকুমেন্টের সঙ্গে মিলিয়ে দিন। - ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন:
জমা দেওয়ার আগে সব ডকুমেন্ট ভালোভাবে চেক করুন। - সময়মত ফি প্রদান করুন:
ফি প্রদানে দেরি হলে আবেদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
পাসপোর্ট নবায়নের প্রক্রিয়া
পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে নতুন করে পাসপোর্ট নবায়ন করতে হয়। নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রায় একই রকম, তবে পুরোনো পাসপোর্টের কপি জমা দিতে হয়। নবায়নের ফি এবং সময়সীমাও একইভাবে নির্ধারিত।
অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়া সহজ করতে বিশেষ টিপস
অনলাইন আবেদন করতে গিয়ে অনেক সময় প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দেয়। এর জন্য নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখুন:
- উপযুক্ত ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করুন।
- সব তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন। ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
- ফর্ম সাবমিট করার আগে ডাবল চেক করুন।
দরকারী তথ্যসূত্র
আরও বিস্তারিত তথ্যের জন্য আপনি বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন:
বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
উপসংহার
পাসপোর্ট তৈরি করার প্রক্রিয়া এখন অনেক সহজ এবং অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আরও দ্রুততর হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় নির্ধারিত ডকুমেন্ট এবং নিয়ম-কানুন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাসপোর্টের জন্য সঠিক প্রস্তুতি নিয়ে আবেদন করলে আপনি সহজেই আপনার পাসপোর্ট পেতে পারবেন।
এছাড়া, যে কোনো ধরনের তথ্যের জন্য স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। সঠিক তথ্য নিয়ে এগিয়ে গেলে পুরো প্রক্রিয়া সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হবে।